মৃগাঙ্কশেখর : তোমার কবিতা পড়তে গিয়ে দেখেছি আমি দৃশ্য থেকে নতুন দৃশ্যে চলে যাচ্ছি। যে দৃশ্য হয়তো সরাসরি কবিতায় নেই। কেন বলো তো
এমনটা হয় ?
স্বপন রায় : কবিতাসহ সবকিছুই বস্তু-উৎপন্ন,তো দৃশ্যে পরিনত হওয়ার
বিভিন্ন স্তরে ওই দৃশ্যের একটি গঠনপ্রক্রিয়া থাকে,আমি ওই স্তরগুলো নিয়ে
খেলি,খেলাটা ভাবনামূলক এবং বস্তুর অন্তর্গত স্বভাবের কারণে অযৌক্তিক,অসংবদ্ধ এবং
বিমূর্ত! আমি কবিতাজীবনের প্রথমে একেবারে ব্যাকরণসম্মত ছন্দোময় এবং ওই একই নিয়মে
শাসিত গদ্যছন্দে/মুক্তছন্দে কবিতা লিখতাম।
একদিন মনে হলো এই প্রাণহীন,নিরানন্দের
মূর্তি আমি কেন তৈরি করছি? আশির দশক অন্তিম লগ্নে তখন,চারদিকে মাত্রাশাসিত
কবিতার চেকনাই,দুলে দুলে কবিতা পড়ার ঝোঁক,কম মদ খেয়ে বেশি মাতলামি করার দেখনদারি,
এ সব আমার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠলো!আমি সঙ্কটে পড়ে গেলাম,আমার অভিজ্ঞতা আমার দেখার
সঞ্চয় এক নির্জন ইস্পাত শহরের নিরিখে যে দৃশ্যগত বিভিন্নতা নিয়ে তোলপাড় করতো
আমায়,ছন্দোবদ্ধ মাত্রাশাসিত তখনকার বাংলা কবিতা তাকে ক্যারি করতো না!
সেই শুরু অন্য ভাবনার,কিন্তু ভাবনা
শুরু হতেই জানাও শুরু হলো!তখনকার পরিস্থিতিতে যতটা জানা যায় আর কি!দেখলাম সারা
পৃথিবী জুড়ে যে সব মোড় ঘোরানো লেখালিখি হয়েছে বা সাহিত্য আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই
তৈরি করা হয়েছে এক নতুন পরিসর,সেই ভাবনাসাযুজ্যের মিথষ্ক্রিয়া জন্ম দিয়েছে এক
বিচিত্র কবিতাভান্ডার!আর এ সব কবিরা নতুন ধারার কবিতা লিখেছেন একাডেমিক্স কে
পাত্তা না দিয়ে,তথাকথিত পণ্ডিতদের পরোয়া না করে!কবিতাভাবনার কেন্দ্রগুলি বহু
ব্যবহৃত কাব্যপ্রতিমাকে তছনছ করে নতুন পরিসর গড়ে তুলেছে,নকল না করে নিজের কবিতা
লিখতে চেয়েছেন কবিরা.....আমি আমার অভিজ্ঞতাসঞ্জাত দৃশ্যাবলীকে বা অন্যকথায়
কবিতাগুলিকে এবার দেখতে শুরু করলাম!আমার জীবন থেকে বিদায় নিলো পদ্য,এলো কবিতা!
তো দৃশ্যের এই সঞ্চারমান বায়বীয়তা এবং
অন্যদিকে তার ভেতরে ঘটতে থাকা ধ্বনিময় উৎক্ষেপণ আমায় পদ্যের পুরনো আবহাওয়ার থেকে
কবিতার দিকে নিয়ে গেলো,”কুয়াশা কেবিনের”প্রথম কবিতায় এই ভাবনাকে নিয়ে আসার জন্য
আমি লিখলাম”ভোরাজের কাঞ্চন”,পুরনো কবিতার অগ্রজ কবিরা মানবেন কেনো?”কুয়াশা কেবিন”
জুড়েই ছিলো এও কম্পোজিট দৃশ্যময়তার সচল বয়ে যাওয়া,আমি যত সমালোচিত হলাম পুরনো
কবিতার কবিদের কাছ থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসাহ পেলাম আমার মুষ্টিমেয়
সহযাত্রীদের থেকে যারা আমার বন্ধু ছিলো আর ছিলেন সেই অবাক করা মানুষটি যাঁর নাম
বারীন ঘোষাল!