61sT pOsT : নীলাঞ্জন দরিপার সঙ্গে মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আচ্ছা   উত্তর আধুনিকতা খায় না মাথায় দেয় ? যেকোন শিল্পের ক্ষেত্রে
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     কোনটাই না ! উত্তর আধুনিক এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করাটাই আমার কাছে খুব কঠিন !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
    
     তাহলে তোর কাছে উত্তর আধুনিক কবিতা বলে কিছু নেই
  
নীলাঞ্জন দরিপা:
     আমার পক্ষে বলা কঠিন ! আমি খুব কম পড়েছি ! তবে বিষয় ভাবনা আর প্রকাশ ভঙ্গিমাতে যা যা পরিবর্তন ক্রমাগত ভাবে হয়ে আসছে বাংলা কবিতায়, তার নি:সন্দেহে ভালো প্রভাব আছে |
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     কার পক্ষে ভালো কবিতা না পাঠক ?
নীলাঞ্জন দরিপা:
     নি:সন্দেহে কবিতা ! আর পাঠকের জন্যও তো অবশ্যই !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     কবিতা আর কবিতার পাঠক তার মানে এক পথে চলে না ?
     যেহেতু 'নি:সন্দেহে কবিতা ' আর 'আর পাঠকের জন্যও তো অবশ্যই !' আলাদা করে বললি
নীলাঞ্জন দরিপা:
     সব কবিতা কি কালজয়ী হয়? সমস্ত কবি কি চিরকালীন হয়ে বেঁচে থাকেন? তবে এটাও ঠিক, চাহিদার কথা ভেবে কবিতা লেখা যায় না!
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আর পাঠক ?
     মানে এই কবিতা আর কবির কালজয়ী হওয়া না হওয়ার ফাঁপরে পাঠকের কি হাল হল সেটাই বুঝতে চাইছি।
নীলাঞ্জন দরিপা:
     পাঠক তার নিজের পছন্দ মত দুনিয়া গড়ে নিতে জানেন ! কি ভালো আর কি ততটাও মনে ধরল না, এসব পাঠকের একান্তই ব্যক্তিগত রুচির ওপর নির্ভর করে ! তবুও কিছু কবিতা তো বয়স, কাল নির্বিশেষে সমস্ত কালে সমস্ত সময় সমান জনপ্রিয় হয়ে আছে, থাকবে !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     এই যে জনপ্রিয় একে তুই কি ডিফাইন করতে পারিস ? মানে জনপ্রিয়-র জন টা কে ? মানে ধর আজকে বনলতা সেন জনপ্রিয়। আশেপাশের কথা শুনে যা বুঝি। কিন্তু ওটা ই কি শেষ কথা? আমি বাজি ধরে বলতে পারি জীবনানন্দ দাসের আরও কবিতা বা সব কবিতা পড়ার পর সব পাঠক কিন্তু অনায়াসে আর একটা কবিতা বেছে নিতেই পারেন তার প্রিয় হিসেবে
নীলাঞ্জন দরিপা:
     আচ্ছা , এত্ত কবিতার মধ্যে "বাংলার মুখ" বা "বনলতা সেন"ই (এবং আরও অনেক) এত বেশী জনপ্রিয়তা পেল কেন? নিশ্চয় সেরা দের মধ্যেও বিশেষ কিছু লেখা মানুষের মন বিশেষ ভাবে ছুঁয়ে যায় | জীবনানন্দ দাসের "বোধ" কবিতাটি আমার অসম্ভব রকমের প্রিয় কবিতা! এবং আরও অনেকেরই ! জনপ্রিয়তাকে অভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না ! আর এটাকে এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করাও যায় না!
নীলাঞ্জন দরিপা:
     *ওভাবে
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আমার ধারণা প্রচারের একটা গুরুত্ব আছে।
     তোর কি মনে হয় ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     নিশ্চয় আছে ! কিন্তু প্রচারের কারণ? মানে একই কবির পাঁচটা কবিতার মধ্যে কোনও একটির বেশী প্রচার পাওয়ার কারণ? সেটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে?
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তোর কি মনে হয় ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, যাদের হাতে প্রচারের ক্ষমতা , তাদের রুচি ও পছন্দ প্রাধান্য পায় ! কিন্তু আমার মনে হয় তারাও গুরুত্ব দেন, পাঠকবৃন্দ কোন কবিতা বেশী পছন্দ করবেন, তার ওপরেই !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তার মানে পাঠকের মননটাও যে কোন শিল্পের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে না ! শিল্পের প্রচারের ক্ষেত্রে !
     বিশেষত শিল্পটি যতক্ষণ কবিতা !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     হ্যাঁ প্রচারের কথাই তো বলছি। বা পাঠকের মননকে প্রভাবিত করারও প্রভাব পড়ে
     তাই তো ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     তা পড়ে বৈকি ! ব্যক্তিগত চিঠি থেকে শুরু করে দেয়ালিকা পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় মানুষ তার খুব পছন্দের যে দু-চার লাইন লিখে এবং পড়ে তৃপ্তি পায়, তাকে কি অস্বীকার করা যাবে ? যাবে না !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     শুধু কি তাই ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     কিন্তু কবি সৃষ্টির সময় তার নিজের মনন, নিজের চিন্তা ভাবনা থেকে জন্ম দেন এক-একটা কবিতার ! প্রতিটা কবিতা কিছুটা করে আয়ু খেয়ে নেয় কবির জীবনের!
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     কেস করেছে আঁতলামি করিস না বাপ। শেষ লাইনটা পড়ে আমার জীবন সংশয় দেখা দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ তাহলে ৮০ বছর টানলেন কি করে ভাবছি। হা হা। ইয়ার্কি করলাম। রাগিস না।
নীলাঞ্জন দরিপা:
     চেতনা তে যে চিন্তা ভাবনা গুলো ধীরে ধীরে বড় হয়, তাদের নিজস্ব ধারায় প্রকাশ করার ক্ষেত্র হল কবিতা ! তাই কবিতার রূপ এত স্বতন্ত্র !
  মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :   
     ভালো বলেছিস।   
           
      কবিতার বাজার থেকে চল এবার একটু ঘরে ফিরি
    
     a2 + 2ab + b2 = (a + b)2 !
     এটা কি ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     বীজগণিতের সূত্র |
    
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     যদি বলি কবিতার লাইন
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     হতেই পারে ! বেশ অভিনব প্রসঙ্গে লেখা নিশ্চয়!
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     'অভিনব প্রসঙ্গে' মনে হল কেন ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     শুধু মাত্র লেখার জন্য তো লেখা হয় না ! নিশ্চয় চিন্তা ভাবনায় চমক আছে !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাহলে আসি মূল কবিতায়
    
     অধিক নেশায়,
     মাতাল হয়েছো কিনা, এটুকু বুঝার লাগি, বীজগণিতের সূত্র পড়ো:
     a2 + 2ab + b2 = (a + b)2 !
     ভাবো,
     ভুলের ভূগোলে আছে নেশার মজমা!
     ইদানীং গাঁজা খাই না, গাঁজা খেলে চোর চোর লাগে,
     গাঁজা খায় রাজা,
     রাজার ছাতার নীচে বেঁচে আছি, জানিনা যদিও, রাজ নীতি, যাপিত জীবন, মর্ম,
     রাজা, যার মর্মে, বলে, গাঁজা খায় সাধু, ......
     আর
     পড়ে সূত্র : a2 - 2ab + b2 = (a - b)2 !
     ক্ষমতা ঠাকুর জানে, কলকের সুখটান, মজেছে কোথায়।
     মর্মের গভীরে গিয়ে বলা যায়:
     সাধু! সাধু!!
     ইদানীং গাঁজা খাই না, গাঁজা খেলে চোর চোর লাগে! অথচ আমিই...
     চুরি হয়ে গেছি সেই কবে! মল্লিকার বনে,
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     হ্যাঁ !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     পড়ে দেখ কি চমক অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য।
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     পড়লাম
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     চমক! চমক ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     এই যে নিজের নেশার গভীরতা যাচাই করার জন্য বীজগণিতের প্রয়োগ !!
     এবং তা নিয়ে যথেষ্ট ব্যঞ্জনা !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাতে কি ?
     বীজগণিত ছাড়া নেশার গভীরতা যাচাই করা যায় না ?
     সব নেশারু কি অঙ্ক করতে বসে নাকি ?
     তাহলে তো যে ছেলে অঙ্কে কাঁচা বাবা এসে হাতে মদের বোতল ধরিয়ে বলবে নে বাবা এক ঢোক মার
     তার পর নেশার গভীরতা টা মাপ। অঙ্ক প্রাকটিস হবে
নীলাঞ্জন দরিপা:
     হা হা হা ! ভালো বলেছ ! নিশ্চয় নেশার গভীরতা বীজগণিত ছাড়াও যাচাই করা যায় ! কিন্তু কবি যদি এভাবে ভাবেন, তাতে অসুবিধা কি?
     আর বাবা ছেলের কথাটা বোধ হয় একটু অপ্রাসঙ্গিক মনে হল !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     বাবা ছেলের কথা টা কমার্শিয়াল ব্রেক
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
    
    
     তাহলে বিরতিটা জবরদস্ত !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তার মানে তোর মনে হয় বীজ গণিত প্রাসঙ্গিক এই কবিতায়।
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     প্রসঙ্গ তাই কবির চিন্তা নির্ভর ! আমি-তুমি কিভাবে সেটা বিচার করব?
     *প্রসঙ্গটাই
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আমি বলতে চাইছি একে কি কবিতার ভাষা বলা যায় ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     আমার তো নিজস্ব কোনও ছুঁতমার্গ নেই ! তবে প্রকাশ যদি অমসৃণ হয়, তবে তা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো ! তাই না ?
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তা মসৃণ না অমসৃণ
     মানে বুঝবো কি করে
     ?
     আমি তো সরল পাঠক
    
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     সেটা তো পাঠক বিচার করবে | পড়ে যদি অস্বস্তি হয়, তাহলে নিশ্চয় খুঁত আছে!
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আমি এই কবিতাটা তোকে পড়ালাম এই কারণে যে এটা পড়ে তোর কেমন লাগল। নতুনত্ব আছে। পরীক্ষা আছে।
নীলাঞ্জন দরিপা:
     এই যে নেশার ঘর বোঝার জন্য বীজগণিতের সূত্র মনে করার চেষ্টা, এত আমায় নতুন করে ভাবালও ! মানে, আমি তো এমন করে আগে কখনো ভাবি নি ! নিশ্চয় চমক আছে! তবে চমক সর্বস্ব হলেই মুশকিল! তাই প্রাণ ভরে ভালো বলতে পারলাম না!
     *ঘোর
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তার মানে নতুনত্ব পরীক্ষা নিরীক্ষা থাকলেই তাকে ভালো কবিতা বলা যায় না?
     তাই কি ?
নীলাঞ্জন দরিপা:
     পরীক্ষা-নতুনত্ব থাকলেই ভালো হবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই! সময় বলে দেবে , কোন পরীক্ষা সফল .. কোনটা নয়! এভাবেই তো কালজয়ী রা বেঁচে থাকে.. বাকি সব হারিয়ে যায় !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাহলে কবির ভাষা নির্বাচন বা স্টাইল বা ধর পরীক্ষা-নতুনত্ব এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত হওয়া উচিৎ ? মানে আমি বলতে চাইছি - যে ধর তুই ভাবলি যেভাবে লিখে এসেছে এতদিন সবাই সেভাবে আমি লিখবো না
নীলাঞ্জন দরিপা:
     হ্যাঁ ! একশবার ! এরকম ভাবে ভাবা যেতেই পারে ! কেউ কেউ অর্থ ফুটিয়ে তোলার জন্য, কেউ বা শুধুই কাঠামো নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য এরকম অনেক নতুনত্ব এনেছেন, আনছেন !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     সেক্ষেত্রে তো কবিতার স্বতস্ফূর্ততা হারাচ্ছে
নীলাঞ্জন দরিপা:
     হ্যাঁ ! আর তাই অর্থ আর তার প্রকাশের জন্য যারা কাঠামো নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন, তাদের কবিতায় আমাকে বেশী টানে ! যারা নিছক কাঠামো পালটালে চমক আস্তে পারে ভেবে পরীক্ষা চালান, তাদের কবিতায় বিষয় বস্তু সবসময় ছুঁয়ে যায় না পাঠক কে !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আচ্ছা তুই সমীর কে চিনিস ?
     ও বলছিল তোর কবিতা নাকি মাথার ওপর দিয়ে যায়
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     সব ভাট লিখিস
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     না তো চিনি না.. নিশ্চয় আমার কবিতা ব্যর্থ সবার কাছে পৌঁছতে!
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     সমীর কি সবাই নাকি ?
নীলাঞ্জন দরিপা:
     না ! তাও পাঠক কে কবি উপেক্ষা করতে পারে না তো কোনভাবেই!
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাহলে ধর সমীরই সবাই
     মানে সবাইই সমীর
     সবাই বলছে তুই ভাট লিখিস
     লেখা ছেড়ে দিবি ?
নীলাঞ্জন দরিপা:
     না ! কোনদিনই ছেড়ে দেব না! আমি তো পাঠকের কথা ভেবে লিখতে শুরু করিনি ! কিন্তু মানুষ যদি পড়ে "ভালো" বলে, তাহলে নিশ্চয় ভালো লাগে! তার মানে কখনই এটা নয় যে কেউ খারাপ বললে লেখা ছেড়ে দিতে হবে !
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাহলে পাঠক ঘাটে লাগে না যজ্ঞে লাগে ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     আর যে কথা গুলো এমনিতে বলা যায় না, মনে হয় কোনকিছুকে আশ্রয় করে বলে উঠতে পারবে নিজেকে , তাদেরই তো কবিতায় নিয়ে আসা হয় !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     সেতো বুঝলাম কিন্তু তাহলে পাঠক ঘাটে লাগে না যজ্ঞে লাগে ?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     পাঠক জনপ্রিয়তা নির্ধারণে লাগে !
    
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাতে কবির কি ?
     কবি তো তাহলে কবিতা না লিখে ক্যাট ওয়াকে যেতে পারে
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     প্রচার বিমুখ প্রচুর কবি আছেন যারা পাঠকের তোয়াক্কা করেন না ! কিন্তু তারা সংখ্যায় খুব কম !আর সব কবিরই একটা নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠী থাকে ! সেখানেই কবির সার্থকতা ! যে অন্তত ঐ কটা মানুষ তার লেখা পড়ে নিজেদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাছে ! এটা একটা ভালো লাগা! অস্বীকার করা যায় না !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তাহলে কবির ভালো লাগা কয় প্রকার ও কি কি >?
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     এক প্রকার ! নিখাদ ভালো লাগা ! যার অন্য কোনও নাম নেই !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     আর এই যে পাঠক উসকলে ভালো লাগা
     প্রচার পেলে ভালো লাগা
    
নীলাঞ্জন দরিপা:
     আর এক প্রকার সন্তুষ্টি আছে নিশ্চয় ! নিজের কথা নিজের মনের মত করে কবিতায় ফুটিয়ে তুলতে পারা !
     আরে, ওটা কবির কেন? যে কোনও মানুষের ভালো লাগা ! কবি তো মানুষের বাইরে নয় !
    
মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
     তা বটে।
তোর কবিতা লেখার শুরু ?

 নীলাঞ্জন দরিপা:
১৬-১৭ বছর বয়স থেকে ! তার আগেও দু-একখানা লিখতে চেষ্টা করেছি, খেয়াল খুশী মত !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
কেন?
মানে কি খেয়ালে কবিতা শুরু ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
পড়তে ভালো লাগত কবিতা ! পড়ে মনে হত, এরকম লিখে বোঝাতে পারলে বেশ হয় ! অনেককিছুই খুব সহজে বলে দেওয়া যায় ! ভয়, ইতস্তত ভাব, দ্বিধা এসব কিছুই কাজ করে না তো , তাই ! যা ইচ্ছে লিখে যাও, কেউ আটকাবার নেই !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
শুধু মাত্র এটাই কারণ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
হ্যাঁ ! শুধু কিছু বলতে চাওয়াই কারণ !
আর কবিতা টা আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাধ্যম বলে মনে হয়.. তাই !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
সেই সময় কার কবিতা পড়তিস
সেই সময় কার কবিতা পড়তিস

নীলাঞ্জন দরিপা:
রবীন্দ্রনাথ, সুকুমার রায়, জীবনানন্দ, সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত , সুনির্মল বসু, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কিছু কিছু শঙ্খ ঘোষ; শক্তি চট্টোপাধ্যায় ; জয় গোস্বামী !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
আর এখন ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
(আরও দুজনের নাম অবশ্যই নেব, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্য) !এরা তো আছেনই | তাছাড়া, প্রনবেন্দু দাশগুপ্ত, ভাস্কর চক্রবর্তী, ফাল্গুনী রায়, শ্রীজাত , বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলেন্দু গুন, মন্দাক্রান্তা সেন, যশোধরা রায়চৌধুরী, সুবোধ সরকার, মল্লিকা সেনগুপ্ত, এবং আরও অনেকে !)

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
মেইন স্ট্রিম কবিতা বলে কিছু বিশ্বাস করিস ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
না !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
কেন?

নীলাঞ্জন দরিপা:
প্রথমত, আমার মনে হয় সবকিছুই কবিতা হয়ে উঠতে পারে ! নইলে বড্ড সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে , অন্তত প্রকাশ ভঙ্গীর দিক থেকে ! আর দ্বিতীয়ত, আমি ওভাবে ভাবতেই পারি না, যে এটাই আসল কবিতার ধাঁচ ! ভাঙ্গবে , গড়বে, নতুন কিছু আসবে, এত চলতেই থাকবে, অন্তত আমার এখনো পর্যন্ত তাই মনে হয় !
তবে, আমি এসব ভালো করে বুঝতে পারি না ! হয়তো পরে পারব ! স্পষ্ট কিছু ধারণা গড়ে উঠবে !


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
কবিতা আন্দোলন গুলো সম্পর্কে শুনেছিস ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে কিছু শুনেছি !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
কোথায় শুনেছিস?

নীলাঞ্জন দরিপা:
অনলাইন এ কিছু পড়েছি! কিছু পরিচিত মানুষজনের কাছে শুনেছি! যারা জানেন ঐ সময়ের কথা অল্প বিস্তর !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
তোর কি মনে হয় আন্দোলন সফল ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
কিছু অংশে সফল তো নিশ্চয় ! একটা প্রজন্ম তো পরিবর্তন আনতে চেয়েছে প্রচলিত ধ্যান ধারনায়, এবং সেই পরিবর্তন অবশ্যই কবিতার পরিবর্তনে ! আসলে কবিতার প্রয়োজনে যা কিছু লিখতে হবে, সব খোলাখুলি লেখা উচিত ! তবে প্রয়োজনের বাইরে অকারণে হলে, সেটা ঠিক নয় নিশ্চয় !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
কিন্তু তুই যেসব কবিদের নাম বললি তাদের মধ্যে আন্দোলনের কোন কবি নেই কেন ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনী রায় এর নাম নিয়েছি ! বিনয় মজুমদারের নাম নেওয়া উচিত ছিল ! বাকিদের নাম বলি নি ! কারণ আমি তাদের লেখা কবিতা খুব কম পড়েছি ! মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী,উৎপল কুমার বসু, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এদের লেখা অনেক কম পড়েছি !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
আচ্ছা।
লিটল ম্যাগাজিনে নজর রাখিস?

নীলাঞ্জন দরিপা:
খুব কম ! আসলে আমি তো পুরুলিয়াতে থাকি, এখানে যে কয়েকটা লিটল ম্যাগাজিন বেরোয়,সেগুলো সম্পর্কে জানি ! কিন্তু কলকাতার লিটল ম্যাগাজিন... বিশেষ জানি না বললেই চলে !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
আচ্ছা। আর একটা বিশয়। ধর কবিতার রিপ্রেজেণ্টেশান নিয়ে না না রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। মানে ধর ভিজুয়াল পোয়েট্রি বা দৃশ্য কবিতা। কবিতার ভিডিও। কবিতা ভিত্তিক ছোট ছবি। তোর কি মনে হয় এগুলো উচিত?

নীলাঞ্জন দরিপা:
কবিতা শুধু কবিতা হিসেবেই লেখা হোক !

এরপর তা নিয়ে যে কোনও ধরনের দৃশ্যায়ন হোক, অসুবিধা নেই, কবির অনুমতি থাকলেই হল !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
না সেটা কবির অনুমতি ছাড়া সম্ভবই না। সেটা তো কপিরাইটের প্রশ্ন। সেটা বলতে চাই নি। আমি এই বিষয়গুলো উচিৎ কি উচিৎ নয়। এবং কেন উচিৎ বা উচিৎ নয় সেটা জানতে চাইছি।

নীলাঞ্জন দরিপা:
আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, এটা উচিত বা অনুচিতের প্রশ্নই নয় ! এটা অপ্রয়োজনীয় ! মানে এই কবিতা-ভিডিও তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই ! কারণ প্রতিটা কবিতা কিছু বলতে চায় ! যেটা পড়ে বা শুনে পাঠক বা শ্রোতা সেই ছবিটা দেখতে পায়, উপলব্ধি করতে পারে ! ভিডিও হলে সে তো কবিতার আসল প্রাণ টাই হারিয়ে দেবে ! তবে, চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে কোথাও কোনও কবিতা ব্যবহৃত হতেই পারে, অবস্থা ফুটিয়ে তলার জন্য!

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
আচ্ছা। আর আবৃত্তি ?

নীলাঞ্জন দরিপা:
আবৃত্তি ভালো ! কবিতা কেমন ভাবে পড়লে তার অর্থ খুব ভালো ভাবে শ্রোতার কাছে ফুটে উঠবে , সেটাই তো আসল বিষয় এক্ষেত্রে !

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় :
আচ্ছা।
আর শেষ কথা। সমীর বলে আমিও কাউকে চিনি না।

নীলাঞ্জন দরিপা:

হা হা হা হা ..