65Th pOsT : সদ্যপ্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে বলছেন সমীর রায়চৌধুরী


সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং সমীর রায়চৌধুরী

Р    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এখন শুধুই স্মৃতি তাই আপনার স্মৃতির পাতা ঘেঁটে কিছু বলুন আমাদের...

আমিই সুনীলকে আইডেণ্টিফাই করি।সুনীল তখন কেউই না।সুনীলের সঙ্গে আমার যখন আলাপ হয় সুনীলও একটা ভেলভেলেটা আমিও একটা ভেলভেলেটা। সিটি কলেজের দেয়াল পত্রিকায় দেখলাম একটা কবিতা লিখেছে একটা ছেলে।বেশ ভাল লাগল কবিতা।ফলে আমি কবিতাকে ভালবেসে সুনীলকে খুঁজে বের করি।আমি সুনীলের থেকে এক বছরের বড় আমরা একসাথে পড়তাম একই কলেজে।ওর বিষয় ছিল অর্থনীতি আমার বিষয় ছিল প্রাণিবিদ্যা

Р    হাংরি আন্দোলনের ময়দানে আপনার চোখে কৃত্তিবাসের সুনীল কিভাবে ধরা দেন ?

হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে সুনীল যতই উল্টো কথা বলে থাকুক বেঁচে থাকার সময় আমি দেখেছি সুনীল পরে হাংরি আন্দোলনের দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে কৃত্তিবাসকেও একটা আন্দোলন বলতে শুরু করল।কিন্তু প্রথম দিকে তা বলেনি প্রথম দিকে বলেছিল কৃত্তিবাস হচ্ছে প্রথম দিকে তরুণতম কবিদের মুখপত্র।অর্থাৎ সমস্ত তরুণ কবিদের মুখত্র।কিন্তু সেটা আসতে আসতে ছোট হতে হতে সেটা চার পাঁচজন কবির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল।যেন তারাই কৃত্তিবাস!ক্ষমতার কাছে গেলে একটা স্তাবকতা পেয়ে বসে ক্ষমতার যা যা দুর্বলতা ক্ষমতার যা যা ভাল খারাপ সবই তো তাকে মেখে নিতে হয় তার মধ্যে মিশে যায় ফলে ক্ষমতার যা যা খারাপ সেগুলো সুনীলের মধ্যেও ছিল।


Р    ব্যক্তিগত সম্পর্ক বন্ধুত্ব সুনীলসমীরদা , আপনি কী বলবেন?

আমার সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল।আমাদের সম্পর্ক ছিল পারিবারিক।শুধু দুঃখের বিষয় সুনীল একটু ভুল বুঝেছিল পরে গিয়ে।যখন আমি হাংরি আন্দোলন করলাম।তো সুনীল ভাবল যে আমি বুঝি কৃত্তিবাস থেকে আলাদা হয়ে গেলুম।তা তো আর নয়।কারণ তারপরেও সুনীল আমাকে একটা চাঁদার বই পাঠিয়েছিল যে কৃত্তিবাসের জন্য কিছু টাকা জোগাড় করে দিস।তো আমি কিছু টাকা পাঠিয়েছিলাম সুনীলকে এই বলে যে তোর ওই চাঁদার বইটা দিয়ে প্রচুর টাকা জোগাড় হয়েছে টাকাটা আমি পাঠাচ্ছি।

Р    অমলিন বন্ধুত্বের মধ্যেও কোনো ফাঁক বা শূন্যস্থান আজকের দিনেও কি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে? সুনীলের এমন কোন কথা বা কাজ যেটা মাঝে মাঝেই যন্ত্রণা দেয় ... অবশ্য এখন আর ওসব হয়ত বলতে চাইবেন না ...

এখন মনে হয় আমারই সব ভুল।ও মারা গেছে তাই আর বিতর্কের জায়গা নেই।ফলে কার কোথায় ভুল সে সব হিসেব করার জায়গা আর নেই।আমি যেহেতু বেঁচে আছি বেঁচে থাকা মানুষদের মধ্যে আছি তাই আমার এটা বলতেই ভাল লাগে যে আমারই সব ভুল।অন্তত আমার নিজের মনের মধ্যে ভাল লাগে আমারই সব ভুল সুনীল তো ঠিক ছিল।সুনীল তো এখন সুনীল নয় সুনীল এখন অমৃত কণা।সেই কণা যার মৃত্যু নেই।ইহজগতের মধ্যেই আমি আছি পার্টিকেল জগতে এখনও চলে যাইনি ফলে এখন এই বেঁচে থাকা মানুষদের মধ্যে থেকে আমি বলছি সব দোষ আমার।



Р    এই সময় কবি/লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভুললে চলবে না যে সুনীল হচ্ছে সেই লোকটা যে যৌবনেই বলেছিল “শুধু কবিতার জন্য”।সুনীলের শুধু কবিতার জন্যই মানব জন্ম।ভাবতে পার একজন মানুষ বলছে শুধু কবিতার জন্যে তার এই মানব জন্ম।এবং সেটা সুনীল প্রমান করেছে সে তার জীবনের মধ্য দিয়ে।সে আধুনিক কবিতার অন্যতম কারিগর এবং তিনি ছিলেন আমাদের এই সময়ের জনপ্রিয়তম কবি গল্পকার উপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সাহিত্যের প্রত্যেক এলাকায় তার গ্রন্থগুলির কারতিজ আজও সর্বাধিক।সব বই গুলো মিলিয়ে যদি একজন লেখকের বইয়ের কারতিজ হিসেব করা হয় সেখানে সুনীলকে তুমি পাবে এক নম্বর জায়গায়।তারচেও বড় জিনিস হচ্ছে সুনীলের আধুনিক কবিতার রক্ত মাংসের নায়িকার সৃষ্টি,নীরা তার অনন্য সৃষ্টি।এই সময়ের যুবতীরা , হয়তো তুমিও , নিজেদের সত্ত্বায় নীরাকে সনাক্ত করে প্রাণিত হয়েছেন।এমনকি ব্রততী বলল যে প্রথম জীবনানন্দ পড়ে মনে হত আমি বনলতা তারপর আমি ভেবেছি আমিই তো নীরা।


[বাকের পক্ষ থেকে আমরা উল্কা-কে পাঠিয়েছিলাম সমীর রায়চৌধুরীর কাছে । উপরের কথাগুলি ২ জনের মধ্যে হয় । সমীরদাকে ধন্যবাদ । উল্কাকে সাবাশ । ]