মৃগাংক ঃ লেখালেখি শুরু করলি কেন ?
নির্মাল্য সেনগুপ্ত ঃ ছোটবেলা থেকেই মনে হত চারিদিকে যে এত নায়ক, বীরপুরুষ, রাজা ইত্যাদি ইত্যাদি ছড়িয়ে আছে , যেগুলো হওয়ার বাসনা সবার মধ্যেই থাকে, তারা তো সবাই গল্পের চরিত্র । আমার সর্বশ্রেষ্ঠ নায়ক ছিল শক্তিমান, ডি ডি ওয়ানে হত।
তাও তো সৃষ্টি কোনো লেখকের হাতে । অর্থাৎ সব্বার উপরে হলেন তিনি, লেখক ।
সেইজন্যই লেখার বাসনা জাগে ।
মৃগাংক ঃ গল্প লেখার সময় কোন বিষয়গুলো মাথায় রেখে লিখিস ?
নির্মাল্য ঃ তেমন কোনো চাপ রাখিনা মাথায় । আমার বেশিরভাগ গল্পই নিজের জীবন থেকে ধার নেওয়া । সত্যি ঘটনার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিই ।
মৃগাংক ঃ গল্পের বিষয় নির্বাচনে কতটা গুরুত্ব দিস ?
নির্মাল্য ঃ নির্ভর করে কেমন গল্প লিখছি । বেশিরভাগ সময়ই আমি লেখালিখি করি প্রফেশনাল কারণবশত । ফলে একটা গল্পের প্লট অবশ্যই মাথায় নিতে হয় । এরপর সাজাতে হয় তার চরিত্র, পরিধি, ব্যাপ্তি ইত্যাদি । তবে মাঝে মাঝে খেয়ালখুশি লিখি । আমার অবসর সময়ে লিখতে সবথেকে বেশি ভালো লাগে । সেগুলো হয় সম্পূর্ন নিজের জন্য লেখা, পাঠকের জন্য নয় । ফলে বিষয় নির্বাচনের মাথাব্যথা থাকেনা ।
মৃগাংক ঃ তোর লেখায় কোন দিকটা শক্তিশালী আর কোন দিকটা দুর্বল ?
নির্মাল্য ঃ শক্তিশালী না শিথিল তা জানিনা তবে দুর্বল দিক অবশ্যই বলব আমার
ধৈর্য্যহীনতা । শেষ অবধি একই রেশ ধরে রাখাটা বেশ পরিশ্রমসাধ্য মনে হয় ।
মৃগাংক ঃ প্রিয় লেখক কে এবং কেন ?
নির্মাল্য ঃ একজনকে নির্বাচন করাটা বেশ কষ্টকর । তবে তেমন হলে সবার উপরে রাখব শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে । ওনার গল্প পড়তে হয়না । বইটা খুললে পুরোটা চোখের সামনে সিনেমার মতো ভেসে ওঠে । (অবশ্যই আবার বোমকেশ নয়।)
মৃগাংক ঃ লেখার স্টাইলের ক্ষেত্রে সতর্ক ভাবে স্বতন্ত্র থাকার চেষ্টা করিস ?
নির্মাল্য ঃ আমার মনে কাউকে অনুকরণ না করলে সতন্ত্র থাকার জন্য সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন
পড়েনা । নিজস্বতা এমনিই চলে আসে । তবে বহু লেখককেই অনুসরণ করি এবং সেটা
বোধহয় মোটেই দোষের নয় ।
মৃগাংক ঃ বাংলা সাহিত্যের গ্রাফটা পড়ে যাচ্ছে , তোর কি মত ?
নির্মাল্য ঃ কী জানি, আমি যেই পরিবেশে বড় হয়েছি বা এখনও হচ্ছি সেখানে বাংলা সাহিত্য জল
আর খাদ্যের পরেই স্থান অর্জন করে । এই প্রচন্ড আধুনিক যুগে তেমন যদি কিছু
ঘটে আশ্চর্য্য হবনা। তবে দুঃখ নেই, আমার মত বহু বোকা বাঙালি আছে যাদের
জন্য গ্রাফটা একটা স্তরে এসে ধ্রুবক হয়ে যাবে ।
মৃগাংক ঃ পোস্ট মডার্নিসমে বিশ্বাস করিস ?
নির্মাল্য
ঃ শব্দটার
বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় উত্তর আধুনিকত্ব । আমি নিজেই বেশ সাবেকী ।
আগে আধুনিক হই তারপর উত্তর দক্ষিণ বিচার করব । তবে পোস্ট মর্ডানিজমের নামে
কবিতা বা গল্পে পেরেকের গলকম্বল অথবা জবাফুল কুস্তি করছে এসব যারা জোর
করে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তাদের জন্য আমার যথেষ্ট সহানুভূতি আছে ।
আগে আধুনিক হই তারপর উত্তর দক্ষিণ বিচার করব । তবে পোস্ট মর্ডানিজমের নামে
কবিতা বা গল্পে পেরেকের গলকম্বল অথবা জবাফুল কুস্তি করছে এসব যারা জোর
করে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তাদের জন্য আমার যথেষ্ট সহানুভূতি আছে ।
মৃগাংক
ঃ কেউ
যদি বলে ঢপের লিখিস, তাকে
আর নিজেকে কি বলবি ?
নির্মাল্য ঃ ঢপের গল্প লিখে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র ইত্যাদি লেখকেরা
অমর হয়ে গেলেন এবং তাদের টেনিদা/ ঘনাদা ইত্যাদি চরিত্ররাও, আমিতো আপ্লুত
হয়ে পড়ব। তাকে বলব এটা আপনার বাহুল্য আর নিজেকে বলব বার খেওনা ।
নির্মাল্য ঃ ঢপের গল্প লিখে নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র ইত্যাদি লেখকেরা
অমর হয়ে গেলেন এবং তাদের টেনিদা/ ঘনাদা ইত্যাদি চরিত্ররাও, আমিতো আপ্লুত
হয়ে পড়ব। তাকে বলব এটা আপনার বাহুল্য আর নিজেকে বলব বার খেওনা ।
মৃগাংক
ঃ গল্পের
ক্ষেত্রে এবস্ট্রাকশান সহ্য হয় ?
নির্মাল্য ঃ সহ্য অসহ্যের ব্যাপার নেই । আমার মনে হয় অ্যাবস্ট্রাকশন নির্ভর করে লেখকের
চরিত্রের উপরে। ফলে সেটা যত টাইট হবে গল্পের বাঁধুনি বাড়বে ।
নির্মাল্য ঃ সহ্য অসহ্যের ব্যাপার নেই । আমার মনে হয় অ্যাবস্ট্রাকশন নির্ভর করে লেখকের
চরিত্রের উপরে। ফলে সেটা যত টাইট হবে গল্পের বাঁধুনি বাড়বে ।