এরপর বেশ কিছু দিন কেটে গেছে আমাদের কথা হয় নি। তারপর একদিন নিজেই ডেকে
নিলেন। আমার কাছে কোনো প্রশ্ন ছিল না। চুপচাপ বসেছিলাম। আদরের বিড়ালের মাথায় হাত
বুলতে বুলতে বললেন, কিছু খাবে? মাথা নাড়লাম। জানালাম, খেয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ চুপ
দুজনেই। তারপর উনিই বলতে থাকলেন। ছেলেবেলায় বাড়ির পেছনে, রেললাইন ছিল। রেললাইন
পেড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে একটা ছোট নদী পড়ত। মরা নদী। বর্ষার সময় জল আসত। জল ঢুকে পড়ত
আমাদের বাড়ির ভেতরও। বারান্দা ডুবে থাকত, সারাটা বর্ষা। আমরা নৌকা ভাসাতাম,
কাগজের। আমি আর আমার বোন। আমার থেকে দুই বছরের ছোট। আমরা খুব গরিব ছিলাম। এখন
বুঝতে পারি। ছোটবেলায় বুঝতাম না এসব। কাদের গরিব বলে কাদের বড়লোক। আমাদের ওখানে
সবাই প্রায় একই রকম। মাকেও কখনো বলতে শুনি নি, এসব নিয়ে। আমাদের চাহিদাও খুব কম
ছিল। আমাদের এই জল উঠে আসাটাই ভালো লাগত। ঘরের কাছে নদী। অন্য সময়, সময় পেলেই
রেললাইন পেরিয়ে চলে যেতাম নদীর কাছে। কাদা জমে থাকত। কখনো কাদায় গেঁথে থাকত মরা
মাছ। বাড়ি নিয়ে আসতাম। মাছ ভাজা তো আর রোজ জুটত না। আর জুটত ঐ বর্ষাকালে।
বারান্দায় ছিপ নিয়ে বসতাম। মা আটা দিত। তাই দিয়ে চার বানাতাম। মাছ সব ছুটকো ছাটকা।
তাতেও একটা আনন্দ ছিল। কী বুঝলে?
কিছুই বুঝিনি। মাথা কাজ করছিল না। কদিন ভেজা পড়েছে। ঠাণ্ডা লেগেছে। মাথাটা
ঝিমঝিম করছে। বর্ষাকালটা এমনি কাটে আমার। বুঝতে পারছিলাম না, ডেকে এনে কেন ছোট
বেলার গদ্য শোনাচ্ছেন। আমার গল্প করার মুড ছিল না। নেহাত ডেকেছেন বলে আসতে হয়েছে।
আগের দিনের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। গলা ধাক্কা দেননি। তবে নানা ভাবে বুঝিয়েছিলেন কথা
বলতে চান না।
কবে থেকে কবিতা লেখা শুরু করেছি জানতে চাইলে না তো ! প্রশ্নটা করেছি কি না
ভুলে গেছি। অনেক দিন ধরে কথা হচ্ছে তো। আর নিজের কাজ নিয়ে বারবার পড়াটা আমার ধাতে
নেই। আর আজ যেহেতু প্রিপেয়ারড হয়ে আসা হয়নি।