দেবরাজ চক্রবর্তী
জন্মঃ ১৮ নভেম্বর,১৯৮৩ কলকাতায়
পিতাঃ জ্যোতি চক্রবর্তী
মাতাঃ চিত্রলেখা চক্রবর্তী
শিক্ষাঃ নেতাজীনগর বিদ্যামন্দির(কলকাতা)
পরবর্তী উচ্চশিক্ষা বেঙ্গালুরুতে ইঞ্জিনিয়ারিং।
প্রিয় বিষয় গনিত,রসায়ন
কবিতা লেখার শুরু ৮ বছর বয়স থেকে।
কয়েক বছর কবিতার জগতের বাইরে থেকে
পুনর্বার ১৬ বছর বয়স থেকে লেখার শুভারম্ভ।
২০০৮ সালে ‘পারেজিয়া’ পত্রিকা সম্পাদনা।
প্রথম বইঃ মধ্যরাত্রির প্রেসক্রিপশন
প্রকাশঃ কলকাতা বইমেলা ২০১১
এছাড়া বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে লেখা-লিখি।
ভাললাগাঃ কবিতা পড়া,গান শোনা,ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ,পুরনো
কলকাতার ইতিহাস চর্চা।
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
অনলাইনে
কবিতা চর্চাকে কি চোখে দেখো?
এই যে
রোজ দিন এতো 'দারুণ' অসাধারণ' কবিতা
লেখা হচ্ছে...
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
সত্যি
কথা বলতে কি,একটা সময় ছিল যখন এই অনলাইন কবিতা লেখা সম্বন্ধে অতটা ধারনা ছিল
না...পছন্দও করতাম না খুব একটা...আসলে লেখা লিখির ক্ষেত্রে আমি একটু আমার
পূর্বসূরি দের দ্বারা অনুপ্রাণিত...তাই সংবাদ পত্র বা ছোট পত্রিকা হাতে পেলে সেটা
পড়া...অগ্রজ কবিরা বা নতুন রা কি ধরনের লেখা লিখছে সেটা আগ্রহ নিয়ে পড়া...বা ধরো,বিভিন্ন মেলায় সেগুলো কে সবার সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে আমি খুবই
আগ্রহী...কিন্তু ইদানীং কালে, এই অন্য লাইন ব্যাপার টা
এসেছে...প্রথম প্রথম অতটা ভালো না লাগলেও এখন অনেক পত্রিকা খুব ভালো কাজ করছে অন্য
লাইন এ...এছাড়া এখানে প্রচুর মননশীল পাঠক দের সাথে আলাপ-পরিচিতি হচ্ছে...এটা একটা
ভালো দিক,আমরা যারা দূরে থাকি তাদের পক্ষে খুব ভালো একটা
জায়গা বলে মনে করছি...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
আর
সাথে যে আরও হাজার টা কবিতা আসছে
সেটা
কি একটা সুস্থ অভ্যাস বলে মনে হচ্ছে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
দেখো,কবিতা মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে লেখে...নিজের কথা বলার জন্য...সেখানে
অনেক কবিতা আসতেই পারে,কোনও অন্য লাইন পত্রিকার ক্ষেত্রেও
এই বাছাবাছির ব্যাপারটা থাকছে...সেটা প্রিন্টেড পত্রিকা গুলোতেও হয়...পাঠকই বিচার
করবেন কবিতার মান...আর সম্পাদক তার কাজ করবেন...নিজের জায়গায় কেউ কবিতা লিখলে তাতে
কোনও অসুবিধা নেই...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
আর
গ্রুপ গুলিতে যে কবিতা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে
like আর অসাধারণ
কবিতায় ভরে যাচ্ছে?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
সব
কবিতা নিশ্চয়ই অসাধারণ নয়...এখানে লাইক ব্যাপারটা অনেকটা ভালো লাগা বা না লাগা,বুঝে লাইক করা বা খুশি করার জন্য লাইক করা,এই
ব্যাপার টা চোখে পড়ে...এটা মানুষের ধর্ম...মানুষ কে খুশি করা,সেটা লেখকরাও কমেন্ট পড়ে বুঝতে পারেন...তবে যদি কেউ সত্যি ভালো লেখে
তাহলে,অনলাইনে লিখতে ক্ষতি কি?যে
কবিতা দুর্বল...কোন পত্রিকায় যা মনোনীত হবেনা...অনেকে সেগুলো এখানে দিতে
চান...এটাই ব্যাপার...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
এছাড়া
আর কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে না কবিতা সংস্কৃতির ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
অবশ্যই...কবির
সংখ্যা বাড়ছে...এটা একটা ভালো আলোচনার জায়গা হয়ে উঠতে পারে...তবে কবিতা লিখে সবাই
কে ট্যাগ করার অভ্যাস টা একটু কমালে ভালো হয়...এখানে যেসব ভালো লেখা আমরা পড়ছি,সেগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে...তবে এই অন্য লাইন ব্যাপার টা যোগাযোগের
মাত্রা টা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে,অন্তত আমার ক্ষেত্রে তো
বটেই...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
এবার
তোমার কবিতায় আসি। তোমার কবিতা কতটা সময় উপযোগী বলে তোমার মনে হয় ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
এই
রে...আমার নিজের লেখার ব্যাপারে আমি কি বলব!তবে এটুকু বলতে পারি যে,আরও চর্চা করছি পড়াশোনা করছি আরও শেখার চেষ্টা করছি...যাতে ভালো কবিতা
লিখতে পারি...
আর
সময় উপযোগী কিনা,সেটা বলবে পাঠক আর সময়...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
পাঠক
কের কি শ্রেণী বিভাগ আছে তোমার কাছে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
না...এই
শ্রেণীবিভাগ ব্যাপার তাই আমার পছন্দ...সময়ের সাথে সাথে পাঠকের মন পালটায়...সে অনেক
লেখাকে আরও নতুন ভাবে বোঝে...আগের পড়া অনেক লেখাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার
করে...নিজেকে আরও ভালোভাবে দেখতে পায়...শ্রেণীবিভাগ নয়,আমি মনে করি সাহিত্যের পাঠক কে আরও মননশীল হতে হবে...শুধু পড়া
নয়...লেখাকে নিজের মতো করে দেখা,বোঝা...তার ব্যাপ্তি,বিস্তার কে লক্ষ্য করা...কবিতার বক্তব্য,আঙ্গিক,বিবর্তন,এই সব ভালোভাবে বুঝতে হবে...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
দুর্বোধ্য
কবিতা পড়েছ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
এরকম
কবিতা পরেছি,যা পড়ে কোনও অনুভূতি হয়না,মনে দাগ কাটার মতো
নয়,আঙ্গিক ও তেমন ভালো নয়,তাহলে
বলতে হবে সেটা দুর্বোধ্য কবিতা নয়,ওই কবিতা টা হয়নি,আসলে কিছু নেই কবিতা তার মধ্যে...আর কিছু কবিতা যা সত্যিই ভাল,যা হয়তো আপাত দৃষ্টি তে বোঝা না গেলেও,একটা
অন্য রকম আবেশের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে,হয়তো কবিতার মধ্যে এমন
কিছু বিষয় এসেছে যা পাঠক ঠিক ধরতে পারেনা...এখন আমি যদি কোন বিদেশি চলচ্চিত্রের
থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কোন কবিতা লেখেন,সেখানে অনেক সময়
পাঠক communicate করতে পারেনা...শিল্প সৃষ্টির জন্য যেমন
একটা প্রস্তুতি দরকার,শিল্প কে বোঝার জন্য ও একটা
প্রস্তুতি দরকার...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
না
তোমার কি মনে হয় যার সাথে পাঠক যোগসূত্র গড়ে ওঠে না সেটা কবিতা নয় ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
কবিতা
যদি ভালো হয়,তবে যোগসূত্র নিশ্চয়ই হবে,depend করে...এটা
অনেকটা ভালোবাসার মতো...একটা সম্পর্কের মতো...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
চল
নিয়েই নি যেটুকু হয়
একটা
প্রশ্ন অনেকেই জিজ্ঞেস করে থাকি তোমাকেও করছি
কবিতা
নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার পক্ষে না বি পক্ষে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
অবশ্যই
পক্ষে...এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা বলতে কোন ধরনের পরীক্ষার কথা বলছ?
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
যে
কোন ধরণের হতে পারে সেটা ভাষা
শব্দ
ব্যবহার
form
...
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
নিশ্চয়ই...এ
নিয়ে আরও পড়াশোনা,আলোচনা,চর্চা
কে সব সময়ই স্বাগত জানানো উচিত...তবে সেটা সঠিক ভাবে...
আঙ্গিক
কে ভাঙা যায়...তবে নিয়ম ভাঙতে গেলে আগে নিয়ম টা ভালোভাবে জানতে হবে...কবিতার ছন্দ,শব্দ,ভাষার ব্যাবহার কে জানতে হবে,পড়তে হবে,শিখতে হবে... শঙ্খ ঘোষের "
নিঃশব্দের তর্জনী", "ছন্দের বারান্দা",নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর "কবিতার ক্লাস"এই বই গুলো ছন্দর
খুঁটিনাটি শেখার জন্য খুবই ভালো...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
সেটা
তো কবিতার ব্যাকরণ গত দিক
সেটাকেই
সহজ করে বোঝানো। তা বলতে চাই নি। বলেছি কবিতার ব্যাকরণ ভাঙার কথা
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
ব্যাকরণের
কোন দিক টা ভাঙার কথা বলছ?আগে সেটা তো বলতে হবে...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
যেকোনো
দিক
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
ভাঙতে
গেলে আগে নিয়ম টা জানতে হবে...ধরো,তুমি একটা কবিতা
লিখছ...তোমার মাথায় কবিতার লাইন গুলো আসছে...একটা ফর্মে...তুমি কবিতা টা
লিখলে...লেখার পর পড়তে গিয়ে দেখলে হোঁচট খাচ্ছ...দেখলে কবিতা টি হয়েছে
অক্ষরবৃত্তে...কিন্তু কোনও মিটার নেই লাইন গুলোতে...তুমি যদি ছন্দ টা না জানো,তাহলে ওর মধ্যে একটা টেকনিকাল ভুল থেকে যাবে...পাঠক পড়তে গিয়ে ধাক্কা
খাবে...আর ভাষা টা সম্পূর্ণ কবির ব্যাপার...পাঠকের মনে প্রবেশ করতে হবে সেই
কবিতা...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
একটু
অন্য দিকে যাই। তোমার ছোটবেলা বড় হওয়ার সাথে তোমার কবিতার বড় হওয়ার কি কোন যোগ আছে
?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
আমার
জন্ম কলকাতা শহরে...আমার যখন ৮ বছর বয়স তখন আমি প্রথম ছড়া লিখি... আমাদের স্কুলে
তিনটে বই আমাদের পড়তে হতো..."নিজে পড়","কিশলয়"
আর "সহজপাঠ"...আমার মনে খুব বড়ো প্রভাব পরেছিল...আমার বাবাও লিখতেন,এবং আমাদের বাড়ির অনেকেই...এর একটা প্রভাব তো ছিলই...
এছাড়া
আমি যেখানে থাকতাম সেখানকার অনেক প্রভাব আছে আমার লেখায়,পড়ায়...আমি দলছুটের একটা column লিখছি...ওখানে
"আমার কবিতা লেখা" নামে একটা গদ্য প্রকাশিত হবে ওখানে বিস্তারিত ভাবে
লিখছি...কারণ এই ব্যাপারে বলতে গেলে অনেক কথা চলে আসবে...আমার জন্ম কলকাতা তে হলেও,আমার বড়ো হওয়া কিন্তু মফস্বলের দিকে...তাই ওটার প্রভাব আছে...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
পাঠক
আর কবি কোনটা হিসেবে নিজেকে বেশী নম্বর দেবে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
অবশ্যই
পাঠক...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
কবি
হিসেবে দিলে কি একটু কম বিনয় হয়ে যেত বলে বললে না ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
না,সেজন্য নয়...বিনয় মজুমদার আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় কবি...সেক্ষেত্রে
বিনয় টা কম হলে চলবে কেন...আমি প্রথমে পাঠক,আর কবি কিনা
সেটা নির্ধারণ ও করবে পাঠক...আমি সবার আগে পাঠক...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
তা পা
ছাড়া পাঠক কিনা একটু পরীক্ষা করে দেখব?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
দেখতে
পারো...তবে সেটা কীরকম আগে জানাতে হবে তো...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
বাহ
সাহস আছে! দেখে খুশি হলাম।
আসলে
এই আলোচনা তো খুব বোরিং তাই পাঠক কে মাঝে মাঝে একটু চুটকি শোনাই
তোমার
প্রথম প্রকাশিত কবিতা মনে আছে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
হোক
না...ক্ষতি কি...মনে আছে...পাড়ার একটা সুভেনিয়রে ছাপা হয়েছিল...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
কত
বছর আগে ?
কবিতা
টা মনে আছে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
সে
প্রায় দশ-বারো বছর আগে...হ্যাঁ,মনে আছে...
আমি
তখন ক্লাস ইলেভেনে পরতাম...কাঁচা হাতের লেখা আর কি...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
কোন
পত্রিকায় কবিতা বেরনোর পর সব থেকে বেশি আনন্দ হয়েছিল ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
" বিজল্প"...২০০৯,মার্চ সংখ্যা...ওখানে আমার আরেকটা লেখা ছিল...ব্রাত্য বসুর "রুদ্ধ-সঙ্গীত"
নাটক নিয়ে...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
কেন ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
অনেক
প্রতিষ্ঠিত লেখক,কবির সাথে আমার লেখা প্রকাশিত
হয়েছিল...লেখাটার খুব প্রশংসাও হয়েছিল...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
কবিতা
লিখতে কি লাগে ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
ভালোবাসা
আর মন...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
প্রকাশ
লাগে না ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
লাগে...তবে
সেটা তারপর...
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
বিনয়
মজুমদার এর কবিতার একটা লাইন বল
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
"অবশেষে
দেখি, প্রেম নয়
পড়ে
আছে পৃথিবীর অবক্ষয়ই সহনশীলতা
নিষ্পেষণে
ক্রমে ক্রমে অঙ্গারের মতন সংযমে
হীরকের
জন্ম হয়,দ্যুতিময়,আত্মসমাহিত"
মৃগাঙ্কশেখর
গঙ্গোপাধ্যায়:
এতো
লাইন থাকতে এটাই বললে কেন ?
দেবরাজ
চক্রবর্তী:
কারণ,কোটি কোটি বছর ধরে মাটির তলায় থাকতে থাকতে কয়লা,গাছ যেরকম হীরকে রূপান্তরিত হয়, তেমনই আমার
ভালোবাসা,কথা,মন যন্ত্রণার
দ্বারা চাপা থাকতে থাকতে কবিতায় পরিণত হয়...এই লাইন তার দ্বারা আমি ভীষণ ভাবে
প্রভাবিত হয়েছিলাম...