কবির ইচ্ছেতেই নামটা গোপন রাখা হল।
যে নামে এতোদিন এতো ইণ্টারভিউ পড়ে এসেছেন তার, সেই নামের বাইরে। বললেন, রত্নাকর
লিখ নামের জায়গায়।
আমার মাথার ভেতর দিয়ে কারা যেন আসে
যায় বুঝলে মৃগাঙ্ক। কবিতা লিখি বলে নিজেকে খুব বেয়াদপ মনে করি। এখন তো সবাই কবি।
প্রতিদিন কোটি কোটি কবিতা লেখা হয়। পিঠ চাপড়ানিও পাচ্ছে। আমাদের সময় পিঠে হাত রাখা
ছিল। আজকাল বড় বেশি কথা বলি। মনে হয়, নিজেরই মনে হয়। কবিতা কবে প্রথম লিখলাম জানতে
চেয়েছ? মাঠটা খাঁখাঁ করছিল সন্ধ্যেবেলা। আকাশে তারা কম ছিল অন্য দিনের তুলনায়। আমি
হাই তুলছিলাম। দূরে আমাদের শ্মশান। গরিবদের। আমি দেখতাম। নতুন লাশ এলে। কি রকম হত
বল তো। অনেকটা অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালানোর মতো। একটা সীমানা পেরোনো। চুপচাপ। আমি
দেখতাম সেখানে কিছু পাখি আসত। কিছু কুকুর শেয়াল ঘুরে বেড়াতো। পোড়া মাংস খেতে।
আচ্ছা মানুষ খেলে তাকে কোন্ শ্রেনীর খাদক বলি বল দেখি। এখানেই আসল কথা। আমরা একটা
শ্রেনী খুঁজি সব সময়। সেখান থেকে শ্রেনী শত্রু। সেদিন লদু কাকাকে কে একজন
বোঝাচ্ছিল, মেহরাব অন্য পার্টি করে বলে ও তোমার শ্রেনী শত্রু। ভাবো। খেতে পায় না,
তার আবার পার্টি তার আবার শ্রেনী শত্রু। কি হল। বিরক্ত হচ্ছ? ভাবছো একি কথা বকছে
কেন লোকটা। হ্যাঁ কথাগুলো তো পুরোনো। অনেক দিন ধরে বলে আসছে সবাই। আন্দোলন তো কম
হল না। কিন্তু কথা গুলো পুরোনো হল অবস্থা তো পুরোনো হল না। ও হ্যাঁ তুমি তো
জিজ্ঞেস করেছ, কবিতা লিখি কবে থেকে। এসব বকছি কেন। কবিতা তো আমি লিখি না।
-সেকি তাহালে এতো বই! এতো পুরস্কার।
-মৃতকে কি তুমি মানুষ বলো মৃগাঙ্ক।
বলো মড়া। যখন খুব জ্বর আসে, দেখবে মাথায় অনেক কিছু ঘুরে বেড়ায়। তুমি ভাবছো না,
তারা এমনিই ঘুরে বেড়ায়। গরুগুলো যেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে, তেমন নয়। পাখিরা যেমন ঘোরে
তেমনও নয়। আলো। আলোর মতো ঘুরে বেড়ায়।
-ছোটবেলা?
-ছোটবেলা বললেই এখন যেমন আমার মনে পড়ল, হরেক মাল ছটাকা বেচতে
আসা লোকটাকে। অনেক্কিছু নিয়ে আসত, কাঁচের
একটা বাক্স করে। উঠোনে জমা হত, আশে পাশের বাড়ির মেয়ে বৌরা। আমার এটাই ভালো লাগত।
মনে হত একটা মেলা। রোজ হচ্ছে। সেই ফেরিয়ালা যে কবে থেকে আর এলো না আমি বলতে পারি
না। ছোটবেলাও তেমন। কবে আর তাকে ছোটবেলা বলব না, ঠিক বুঝতে পারি না।
( ক্রমশ )